
মাত্র ২১ বছর বয়স বাংলাদেশি নাগরিক ফয়সালের। সম্প্রতি মিয়ানমারের একটি স্ক্যাম সেন্টার থেকে উদ্ধার করে তাঁকে থাইল্যান্ডের একটি সামরিক ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। শুধু ফয়সালই নন, ওই ক্যাম্পে ফয়সালের মতো বিভিন্ন দেশের আরও ২৬০ জন ভুক্তভোগী রয়েছেন।
গত বুধবার থাইল্যান্ডের ওই ক্যাম্পে ভুক্তভোগীদের সঙ্গে কথা হয় রয়টার্সের। শুক্রবার সংবাদ সংস্থাটির এক প্রতিবেদনে উদ্ধার হওয়া এসব ব্যক্তির মধ্যে চারজন ইথিওপীয় ব্যক্তির কথাও উল্লেখ করা হয়েছে। তাঁদের শরীরে ছিল গভীর ক্ষত এবং আঘাতের দাগ। এই সব আঘাত তাঁরা মিয়ানমারের কুখ্যাত স্ক্যাম সেন্টারে থাকার সময়ই পেয়েছিলেন।
ইথিওপিয়ার চারজনের মধ্যে একজন হলেন ইয়োতর। তাঁর বয়স ১৯ বছর। পায়ে গভীর কাটার দাগ রয়েছে। ইয়োতর বলেন, ‘আমি প্রচুর শাস্তি পেয়েছি, প্রতিদিন আমাকে ইলেকট্রিক শক দেওয়া হতো।’
ইয়োতর এবং ফয়সাল সহ বেঁচে ফেরা ভুক্তভোগীদের ওই দলটিকে গত সপ্তাহে মিয়ানমার থেকে থাইল্যান্ডে পাঠানো হয়েছে। তাঁদের বেশির ভাগই মানব পাচারের শিকার হয়েছিলেন। থাইল্যান্ড ও মিয়ানমারের সীমান্ত জুড়ে গড়ে ওঠা স্ক্যাম সেন্টারগুলোর বিরুদ্ধে সাম্প্রতিক আন্তর্জাতিক অভিযানের অংশ হিসেবে তাঁদের উদ্ধার করা হয়েছে।
জাতিসংঘের তথ্য মতে, দীর্ঘদিন ধরে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় কিছু অপরাধ চক্র হাজার হাজার মানুষকে পাচার করে স্ক্যাম সেন্টারে নিয়ে যাচ্ছে। এসব কেন্দ্রে তাঁদের আটকে রেখে এবং জোর করে অনলাইনে প্রতারণামূলক কাজ করানো হচ্ছে।
রয়টার্স জানিয়েছে, সম্প্রতি স্ক্যাম সেন্টারগুলোর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া শুরু করে মিয়ানমারের প্রতিবেশী দেশ থাইল্যান্ড। বিশেষ করে, চীনা অভিনেতা ওয়াং জিং-এর অপহরণের পর। তাঁকে উচ্চ বেতনে অভিনয়ের প্রলোভন দেখিয়ে থাইল্যান্ডে ডেকে আনা হয়েছিল। পরে মিয়ানমারের মিয়াওয়াড্ডি শহরের কাছে তাঁকে পাওয়া যায় এবং চীনে ফিরিয়ে নেওয়া হয়।
চাঞ্চল্যকর ওই ঘটনার পরই থাইল্যান্ড সীমান্তবর্তী কিছু এলাকায় বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়। চীনও থাইল্যান্ডকে এ ব্যবস্থা অব্যাহত রাখার অনুরোধ জানিয়েছে।
ইয়োতর জানান, তিনি ব্যাংককে চাকরির আশায় থাইল্যান্ডে এসেছিলেন। কিন্তু পরে তাঁকে মিয়ানমারে নিয়ে যাওয়া হয়। তিনি বলেন, ‘তারা আমাদের মিথ্যা বলেছিল।’
থাই প্রধানমন্ত্রী পেতংকার্ন সিনাওয়াত্রা জানিয়েছেন, মিয়ানমারের স্ক্যাম সেন্টার থেকে উদ্ধার হওয়া প্রায় ৭ হাজার মানুষ থাইল্যান্ডে আসার অপেক্ষায় আছেন। এর মধ্যে ৬০০ জন চীনা নাগরিককে বৃহস্পতিবার থেকে তিনটি ফ্লাইটে তাঁদের দেশে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
বাংলাদেশি নাগরিক ফয়সাল জানিয়েছেন, তাঁকে এবং অন্যদের দিনে প্রায় ২০ ঘণ্টা কাজ করিয়ে প্রতারণামূলক বার্তা পাঠাতে বাধ্য করা হতো। তিনি বলেন, “যখন কোনো ক্লায়েন্ট ‘আমি তোমাকে ভালোবাসি’ বলত, তখন আমরা তার মন ধীরে ধীরে নিয়ন্ত্রণ করতাম এবং কীভাবে টাকা নেওয়া যায় তা শেখানো হতো। কিন্তু লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে ব্যর্থ হলে, আমাদের মারধর করা হতো।”
ফয়সাল বলেন, ‘আমরা প্রতারক নই। আমরা ভুক্তভোগী।’
পাঠকের মতামত